কক্সবাজারের ঘটনাটি রহস্যে ঘেরা

কক্সবাজারের পর্যটন ও পর্যটকদের ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কতিপয় দুর্বৃত্ত। হোটেল মোটেল জোনে সক্রিয় একটি চক্র কক্সবাজারের পর্যটনের পরিবেশকে ক্রমশ ঘোলাটে করে তুলেছে। পতিতা ও দালাল খদ্দেরদের মাঝে সৃষ্ট দ্বন্দ্বকে প্রবাহিত করা হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। ফলে নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হয়ে ফের আলোচনায় কক্সবাজারের পর্যটন। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে গণমাধ্যমে চাউর হয় একজন নারী পর্যটক গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সেই ঘটনাটি ‘রহস্যজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহিউদ্দিন।

বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ সুপার মাহিউদ্দিন বিডি২৪লাইভকে বলেন, ধর্ষ‌ণের শিকার নারী গত দুই মাসে তিনবার কক্সবাজার এসে‌ছেন। এর আগেও দুই সন্ত্রাসীর বিরু‌দ্ধে থানায় অভিযোগ করেন ওই নারী। তাই বিষয়টি একটু সন্দেহজনক। তিনি আরও জানিয়েছেন- ওই নারী এবং তার পুরুষ সঙ্গীর পারস্পরিক সম্পর্ক ও তথ্যে ব্যপক গরমিল পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিকটিমের বরাত দিয়ে বলা হচ্ছে, তিনি ৯৯৯-এ ফোন করেছিলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো- যাকে ভিকটিম দাবী করা হচ্ছে তার পক্ষ থেকে জরুরী সেবায় কোনো ফোন করা হয়নি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, যে স্থান থেকে অপহরণের কথা উঠেছে ওই স্থান থেকে অপহরণ কোনোভাবেই সহজ নয়। কারণ ওখানে সর্বদাই ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার থাকে। সুতরাং সবকিছু মিলিয়ে এই ঘটনায় রহস্যের শেষ নেই। তবে আশা করা যাচ্ছে, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আসল ঘটনা উৎঘাটন হবে।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর স্বামী। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে মামলাটি করা হয়। এতে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে চারজনকে। আর অজ্ঞাতনামা আসামি দুই-তিনজন। এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন মো. আশিকুর রহমান, মেহেদি হাসান বাবু, মো. ইসরাফিল ও হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন। এসপি মো. হাসানুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে বিকেলে র‌্যাব-১৫ জানায়, এ ঘটনায় ‘জিয়া গেস্ট ইন’ হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে (৩৩) আটক করা হয়েছে। তিনি অপরাধীদের সহযোগী।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী নারী পর্যটক বলেন, বুধবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। তারা ওঠেন শহরের হলিডে মোড়ের একটি হোটেলে। সেখান থেকে বিকেলে যান সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। সেখানে অপরিচিত এক তরুণের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে, এ ঘটনায় তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এর জেরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়।

এ সময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই গৃহবধূকে তুলে নেন তিন যুবক। তারা তাকে পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে ধর্ষণ করেন। এরপর কলাতলীর জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে নিয়ে গিয়ে আরেক দফা ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষের বাইরে থেকে লক করে তারা চলে যান। পরে তারা ৯৯৯ ফোন করলে র‌্যাব তাকে হোটেল থেকে এবং পরে তার স্বামী ও সন্তানকে পর্যটন গলফ মাঠ এলাকা থেকে উদ্ধার করে।

র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিপিসি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান বলেন, কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনের ‘জিয়া গেস্ট ইন’ নামের হোটেল থেকে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) দিনগত রাত দেড়টার দিকে নারী পর্যটক ও তার স্বামী-সন্তানকে উদ্ধার করা হয়। এ ধর্ষণের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ও খোঁজখবর নিয়ে তিনজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।